,

নবীগঞ্জ পৌর নির্বাচন: ২৬৪ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী বিএনপির প্রার্থী

কালো টাকার বিনিময়ে ফলাফল পাল্টে দেয়ার

অভিযোগ আওয়ামী লীগের রাহেল চৌধুরীর

মোঃ মুজাহিদ চৌধুরী/সুমন আলী খাঁন ॥ সকল উৎকণ্ঠা জয় করে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নবীগঞ্জ পৌরসভার ৫ম নির্বাচন। ভোটের পূর্বের রাত্রে ৪নং ওয়ার্ডের গয়াহরি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ও আওয়ামীলীগের পথসভায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার জেরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উতকণ্ঠা দেখা গেলেও ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১০ টি ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। মোট ১৮ হাজার ৭শ ৭৭ জন ভোটারের মধ্যে ১৪ হাজার ২১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ১৬৮ টি ভোট বাতিল হওয়ায় ১৩ হাজার ৮শ ৫৩ ভোট বৈধ ধরা হয়।
চরম প্রতিদ্বন্ধিতা পূর্ণ নির্বাচনে ২৬৪ ভোট বেশী পেয়ে ২য় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ¦ ছাবির আহমেদ চৌধুরী। তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ৫ হাজার ৭শ ৪৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটম প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামী লীগ মনোনীত তরুণ মেয়র প্রার্থী আলহাজ¦ গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫ হাজার ৪শ ৮৫ ভোট ও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবুল আলম সুমন জগ প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৬শ ১৯ ভোট।
আওয়ামীলীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলহাজ¦ গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরী এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে ভোট পুনঃগণনার দাবী জানান। কিন্তু বিষয়টি আমলে না নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ সাদেকুল ইসলাম ফলাফল ঘোষনা করে বিএনপি মনোনীত আলহাজ¦ ছাবির আহমেদ চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষনা করেন। পরে রাহের চৌধুরীর বাসভবেনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ সাইফুল জাহান চৌধুরী বলেন, ছাবির আহমেদ চৌধুরী ব্যাপক কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচনী ফলাফল নিজের পক্ষে নিয়েছে। কালো টাকায় প্রিজাউডিং অফিসার ও পলিং অফিসারদের প্রভাবিত করে ভোট কারচুপি করেছে। আমরা এই ফলাফল প্রত্যাখান করে, ভোট পুঃনগণনার দাবী জানাই। প্রিজাইডিং অফিসার নহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নৌকার ৯৯২ ভোট ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু কন্ট্রোল রুমে এসেই আমাদের ভোট কমিয়ে ৬৬৯ বলা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারকে অর্থের বিনিময়ে প্রভাবিত করে আমাদের প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী রাহেল চৌধুরী বলেন, পৌরবাসীর ভোটে আমি মেয়র নির্বাচিত হই। আমি আপনাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। কিন্তু আপনারা জানেন কয়েকটি সেন্টারে পরিকল্পিতভাবে আমার ফলাফল পরিবর্তন করে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিষয়টি আইনিভাবেই দেখব। এই ফলাফলের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাহেল চৌধুরী।
অপরদিকে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ ওয়ার্ডে ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে যারা বিজয়ী হয়েছেন, বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ জাকির হোসেন পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ৬০৭ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক কাউন্সিলর মোঃ মিজানুর রহমান উটপাখি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৯৬। ২নং ওয়ার্ডে আঃ ছোবহান পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ৪৯৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ সুন্দর আলী পাঞ্জাবী প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪০৭ ভোট। ৩নং ওয়ার্ডে মোঃ নানু মিয়া পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ৬৮৯ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক কাউন্সিলর শাহ রিজভী আহমেদ খালেদ উটপাখি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৫৪ ভোট।
সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডে বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর ফারজানা মিলন পারুল আনারস প্রতীক নিয়ে ১ হাজার ৮শ ৬৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক মহিলা কাউন্সিলর জাকিয়া আক্তার লাকী জবা ফুল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১৬৩৬ ভোট।
৪নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর সাবেক কাউন্সিলর যুবরাজ গোপ উটপাখি প্রতীক নিয়ে ৯৬৬ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি প্রাণেশ চন্দ্র দেব টেবিলল্যাম্প প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৮০২ ভোট। ৫নং ওয়ার্ডে মোঃ লুৎফুর রহমান মাখন পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ৭৬১ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বর্তমান কাউন্সিলর এটিএম সালাম টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৮০ ভোট। ৬নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর জায়েদ চৌধুরী ডালিম প্রতীক নিয়ে ৭৬৮ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি শেখ মোঃ আবুল কাশেম পানির বোতল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৫৩ ভোট।
৪, ৫ ও ৬নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে পূর্ণিমা রানী দাশ আনারস প্রতীক নিয়ে ১হাজার ৩শ ৪৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর মোছাঃ রুকেয়া আক্তার অটোরিক্সা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ১শ ৭২ ভোট।
৭নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর মোঃ কবির মিয়া পানির বোতল প্রতীক নিয়ে ৮৮২ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক কাউন্সিলর আলহাজ্ব রুহুল আমিন রফু উটপাখি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৭৫৮ ভোট। ৮নং ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর বাবুল চন্দ্র দাশ টেবিল ল্যাম্প প্রতীক নিয়ে ৫৭৪ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি সাবেক কাউন্সিলর সন্তষ দাস পানির বোতল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৫৪৫ ভোট। ৯নং ওয়ার্ডে মোঃ ফজল আহমদ চৌধুরী পাঞ্জাবী প্রতীক নিয়ে ৬৭৩ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি শেখ জগলুল হাসান মিটু পানির বোতল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৪৪৪ ভোট। ৭, ৮ ও ৯নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বর্তমান মহিলা কাউন্সিলর সৈয়দা নাসিমা বেগম আনরস প্রতীক নিয়ে ২ হাজার ৫শ ৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারীভাবে বিজয়ী হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মোছাঃ শেলী বেগম চশমা প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ১ হাজার ৩শ ৩৪ ভোট।


     এই বিভাগের আরো খবর